শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪  |   ২৮ °সে

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৪৬

ঐতিহাসিক দেওয়ানের পুল ভাঙতে রোববার গণশুনানি

ঐতিহাসিক দেওয়ানের পুল ভাঙতে রোববার গণশুনানি
অনলাইন ডেস্ক

প্রায় পৌনে ৩০০ বছর আগে নির্মিত সেতুটির নাম দেওয়ানের পুল। এর অবস্থান সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের বাউসী এলাকায়। তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশনায় সেতুটি নির্মিত হয়েছিল বলে লোকজন এটিকে 'দেওয়ানের পুল' নামে ডাকেন। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে পুলটি দাঁড়িয়ে আছে।

সম্প্রতি পুলটি ভেঙে আধুনিক সেতু নির্মাণ করতে বুলডোজার চালায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এতে দৃষ্টি পড়ে গণমাধ্যম ও পরিবেশবাদীদের। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে পুল ভাঙা থেকে বিরত থাকে এলজিইডি। তবে স্থানীয়ভাবে সেখানে সেতু নির্মাণের দাবি উঠলে গণশুনানির উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত জানতে আগামী রোববার পুলের পাশেই গণশুনানি হবে বলে জানিয়েছেন এলজিইডির সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর। তিনি জানান, ১৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর সেতু ভাঙা কার্যক্রম বন্ধ রাখার পর স্থানীয় লোকজন নতুন সেতু নির্মাণের জন্য মানববন্ধন করেন। বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হলে লোকজনের মতামত নিতে গণশুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। রোববার দেওয়ানের পুল সংলগ্ন রাস্তায় সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শুনানি হবে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে না জানিয়ে পুল ভাঙার উদ্যোগ বা গণশুনানির বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না পরিবেশবাদীরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, দেওয়ানের পুল ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। এলজিইডি এটি ভাঙার অধিকার রাখে না। ভাঙতে হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে।

স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, মোগল শাসনামলে সম্রাট মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৪০ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তখনকার শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জেলার দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) ছিলেন গোলাব রাম বা গোলাব রায় নামে এক ব্যক্তি। বাংলার শাসনকর্তা সুজা উদ্দিন খান ও সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার শমসের খানের সময় মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন দেওয়ান গোলাব রাম।

বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের পিতৃভূমি দেখতে তিনি সিলেট থেকে গোলাপগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তবে বাউসী এলাকার দেওরভাগা খালে গিয়ে তিনি আটকে যান। তিনি সেখানকার মন্দির মেরামত ও যাতায়াতের জন্য খালের ওপর সেতু বা পুল নির্মাণের নির্দেশ দেন। দেওরভাগা খালের সেতুটি পরে 'দেওয়ানের পুল' নামে পরিচিতি পায়। এর দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট।

একই স্থানে ৯৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফুট প্রস্থের নতুন সেতু নির্মাণ করতে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ জন্য সেতুটি ভাঙতে গত ২৬ ডিসেম্বর কার্যক্রম শুরু করে এলজিইডি। পুলের ওপরের অংশ ও পাশের অংশবিশেষ ভাঙার পর গণমাধ্যমে সংবাদ ও প্রতিবাদের মুখে ২৮ ডিসেম্বর কাজ স্থগিত করে এলজিইডি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়