মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪  |   ৩১ °সে

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২২, ১২:৩০

মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি : মোদির মুখেও লাগাম

মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি : মোদির মুখেও লাগাম
অনলাইন ডেস্ক

হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার কটূক্তির পর মুসলিম বিশ্বে বেকায়দায় আছে ভারত সরকার। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে দূত ডেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাকও এসেছে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়, এ পরিস্থিতিতে দলের সব মুখপাত্রের মুখে লাগাম পরিয়েছে বিজেপি। ফরমান জারি হয়েছে, নেতা থেকে মুখপাত্র সবাইকে টেলিভিশনের পর্দায় মুখ দেখানো বন্ধ করতে হবে।

সেই নির্দেশ অবশ্য জানতেন না মিরাটের বিজেপি সংসদ সদস্য রাজেন্দ্র আগরওয়াল। নূপুরের মন্তব্য ঘিরে কানপুরে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বক্তব্য রাখতে সোমবার বিকেলে অতিথি হন একটি টিভি চ্যানেলে। যা দেখেই চোখ কপালে ওঠে বিজেপির সদর দফতরে উপস্থিত নেতাদের। তড়িঘড়ি রাজেন্দ্রের ফোনে নির্দেশ যায়, ‘দ্রুত উঠে আসুন টিভি শো থেকে’।

বিজেপি সূত্রের খবর, বিষয়টি যেভাবে ভারতের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক স্তরে কালিমালিপ্ত করেছে, তাতে ওই বিষয়ে ছোট-বড় সব পদাধিকারীকে মুখ খুলতে বারণ করেছে দল। আপাতত নীরবতাই বর্ম করে সময়ের সঙ্গে বিষয়টি থিতিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় বিজেপি নেতারা। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও চুপ। রবিবার ও সোমবার বেশ কয়েকটি সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেখানে ভারতের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা নিয়ে একেবারেই ‘নীরব’ মোদি।

মুসলিম দেশগুলো ভারতের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী কেন চুপ তা নিয়ে সরব বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কথায়, ‘ঘরে ভাঙন ধরায় বহির্বিশ্বের কাছেও দুর্বল হয়ে পড়েছে ভারত। বিজেপির লজ্জাজনক ধর্মান্ধতা আমাদের ভেতর থেকে দুর্বল করার সঙ্গে বহির্বিশ্বেও ভাবমূর্তিকে ক্ষতি করেছে।’

প্রশ্ন উঠেছে কেন মুখপাত্রদের বক্তব্য নিয়ে চুপ করে রয়েছেন মোদি-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। নূপুরকে টুইটারে ফলো করেন নরেন্দ্র মোদি, রাজনাথ সিং থেকে শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা। বরখাস্ত হওয়ার পরও তাকে ফলো করছেন।

বিরোধীদের মতে নূপুরকে শাস্তি দেওয়াটা লোকদেখানো মাত্র। তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্রের কথায়, ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই, একে (নূপুর) ভবিষ্যতে আবার নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে আসা হবে।’ যশবন্ত সিনহার প্রশ্ন, ‘দলের মুখপাত্রদের করা মন্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত কোথায়? না কি প্রধানমন্ত্রী গোপনে তাদের সমর্থন করছেন!’

বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, মুখপাত্রদের শাস্তি দিলেই বিতর্ক থেমে যাবে। কিন্তু ওই মন্তব্যের জেরে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পরিস্থিতি যে এভাবে জটিল হয়ে উঠবে তা ছিল তাদের কল্পনাতীত। পরিস্থিতি সামলাতে সোমবার দ্রুত জাতীয় মুখপাত্রদের বৈঠকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মহানবী (সা.) সংক্রান্ত বিতর্কে কেউ মুখ খুলতে পারবে না।

বিজেপি চাইছে, সময়ই ক্ষতে প্রলেপ দিক। কংগ্রেস নেতৃত্বের পাল্টা অভিযোগ, এই ঘটনা নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপি সমাজে ঘৃণার বীজ বপন করছে। যার ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার কথায়, ‘বিজেপি এত দিন মন্দির-মসজিদ করেছে। শ্মশান-কবরস্থান, ৮০-২০ করেছে। তখন বারণ করা হয়নি। এখন ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মুখপাত্রদের বলি দিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দায় ঝাড়ছেন।’

বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে এমন কোনো আইন নেই।

সূত্র: দেশ রূপান্তর

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়