শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪  |   ২৮ °সে

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:২৪

নেপালের পর্যটন খাতে ‘অশনি সংকেত’

নেপালের পর্যটন খাতে ‘অশনি সংকেত’
অনলাইন ডেস্ক

করোনা মহামারির কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক গোলযোগের মধ্যে পড়ে নেপাল। আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবও পড়ে দেশটির অর্থনীতিতে। তবে ২০২৩ সালে পর্যটন খাত ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল নেপাল সরকার। কিন্তু শুরুতেই ভয়াবহ প্লেন দুর্ঘটনা ধাক্কা দিলো দেশটির পর্যটনখাতে।

নেপালে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে চীন থেকে। নেপালের ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ধনঞ্জয় রেগমি সম্প্রতি বলেন, ‘২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশটির পর্যটন খাতে করোনা মহামারির ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু চীন এখন সীমান্ত চালু করেছে। ফলে আমরা আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীদের আবারও স্বাগত জানাতে পেরে খুবই আনন্দিত।’

বেইজিং ২০১৬ সাল থেকে নেপালকে একটি পর্যটন স্পট হিসেবে প্রচার করে আসছে। ফলে ২০২০ সালে চীনা পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে দেশটিতে। যদিও করোনা মহামারির কারণে নেপালের পর্যটন খাত সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। ২০২০ থেকে ২০২১ সালে অন্যান্য দেশের মতো নেপালের পর্যটন খাতেও ধস নামে। হাজার হাজার লোক তাদের ব্যবসা ও চাকরি হারায়।

দেশটির থামেল, কাঠমান্ডু ও লেকের শহর পোখারায় চাইনিজ রেস্তোরাঁগুলো তৈরি হতে থাকে পর্যটন খাত ঘিরে। চলে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নানা প্রশিক্ষণও। চীনা পর্যটকরা সাধারণত কাঠমান্ডুর চেয়ে লেকের শহর পোখারাকে বেশি পছন্দ করেন। কারণ এখানে বেশ কয়েকটি অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রম রয়েছে। রেগমি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৩ সাল চীনা পর্যটকদের জন্য সুদিন ফেরার বছর।

হিমালয় অধ্যুষিত দক্ষিণ এশীয় দেশ নেপাল যার উত্তরে চীন ও দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। স্বল্প আয়তন আর তিন কোটি মানুষের দেশ হলেও নেপালের ভূমি প্রকৃতি অত্যন্ত বিচিত্র। নেপাল ও চীনের সীমান্তজুড়ে যে অঞ্চল সেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০টি পর্বতের আটিই অবস্থিত। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টও এই অঞ্চলেই। ফলে পর্যটকদের কাছে নেপাল ভ্রমণ অন্যরকম এক আনন্দের খোরাক জোগায়।

দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রায়ই ভূমিকম্পের ঘটনা, বার বার প্লেন দুর্ঘটনার কারণে পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এবারও গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পোখারার প্লেন বিধ্বস্তের ঘটনা সংশয় তৈরি করেছে। রোববার বিধ্বস্ত হওয়া প্লেনটিতে মোট ৬৮ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান, একজন আইরিশ, দুজন দক্ষিণ কোরিয়ার, একজন অস্ট্রেলিয়ার, একজন ফরাসি ও একজন আর্জেন্টিনার নাগরিক রয়েছেন।

নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় ২০০০ সাল থেকে অন্তত ৩০৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ উল্লেখ করে ২০১৩ সাল থেকে নেপালি এয়ারলাইন্সকে তার আকাশসীমা থেকে নিষিদ্ধ করে। এবারের দুর্ঘটনার পেছনেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন বার বার এমন দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

নেপালে ২০১৯ সালে পর্যটক সংখ্যা ১২ লাখে পৌঁছেছে। যেখানে শুধু চীন থেকেই নেপাল ভ্রমণে গেছে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবে মানসম্পন্ন পর্যটন পরিকাঠামোর অভাব, ব্যয়বহুল প্লেন টিকিট ও ভাষার সমস্যার কারণে বারবার ধাক্কা খাচ্ছে দেশটির পর্যটন খাত।

সূত্র: গ্লোবাল টাইমস, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়