মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪  |   ২৬ °সে

প্রকাশ : ২১ মে ২০২২, ০৯:২১

ফলের ঝুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত মাহালি সম্প্রদায়

ফলের ঝুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত মাহালি সম্প্রদায়
অনলাইন ডেস্ক

লিচুর রাজ্য খ্যাত দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুরের প্রায় সব উপজেলায় গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু-রসালো লিচু ও আম। এ মৌসুমে অনেকেই স্বজন-বন্ধুবান্ধবকে ফল উপহার দেন। ব্যবসায়ীরাও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ফল নিয়ে যান। আম-লিচুসহ অন্যান্য ফল পরিবহনের অন্যতম উপকরণ টুকরি বা বাঁশের ঝুড়ি। সারাবছর এসব ঝুড়ি তৈরি করে ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের মাহালি সম্প্রদায়। এবারও আম-লিচুর মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ঝুড়ি তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এ সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা।

মাহালি সম্প্রদায় পেশায় বাঁশ শিল্পের কারিগর। দীর্ঘদিন থেকেই এ পেশায় জড়িত এ সম্প্রদায়ের লোকজন। বছরের অন্য সময় বাঁশ দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, টুকরি, চালুনি, মাছ রাখার খলইসহ নানা উপকরণ তৈরি তারা। তবে ফলের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি তৈরি করে বাঁশের ঝুড়ি বা টুকরি। এ মৌসুমে ঝুড়ি বানাতে দিন-রাত ব্যস্ত থাকে মাহালি সম্প্রদায়ের মানুষ।

বাজারে লিচু পরিবহনের জন্য এই বাঁশের ঝুড়ির বেশ কদর রয়েছে। তবে বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি আর প্লাস্টিকের সহজলভ্যতার কারণে মাহালি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এ পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ফুলবাড়ী-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে জয়নগর মাহালি পাড়া। এ গ্রামে মাহালি সম্প্রদায়ের ৩৬টি পরিবারের বসবাস। কমবেশি সবাই বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রেখেছে। মাহালী পাড়ায় গিয়ে দেখা মেলে স্টেফান সরেন ও তার স্ত্রী মিনা মার্ডি, সুধীর মার্ডি ও তার স্ত্রী সোনামনি হেমব্রম, সুজন মার্ডি, হেমচন্দ্র মার্ডি ও রমেশ মার্ডির। তারা বাড়ির উঠনে বসে আম-লিচু পরিবহনের জন্য টুকরি তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার ফল ব্যবসায়ীরাও চাহিদা মতো ঝুড়ি কিনতে আসছেন।

স্টেফান সরেন বলেন, এবার আমের জন্য ঝুড়ির চাহিদা কম থাকলেও লিচুর ঝুড়ির চাহিদা রয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারেট বাজারে আসার পর থেকে অনেকেই বাঁশের টুকরি নিতে চায় না। লিচুর জন্য কিছু পাইকার আসে- এ কারণে বর্তমানে লিচুর ঝুড়িই বানাই। এছাড়া বাঁশের দাম বেশি। বাঁশ কিনে এনে আমি ও আমার স্ত্রী মিলে দিনে ৪-৫টির বেশি ঝুড়ি তৈরি করতে পারি না।

সুধীর মার্ডি ও তার স্ত্রী সোনামনি হেমব্রম বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে দিনে ৮-১০টি ঝুড়ি তৈরি করি। সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি ঝুড়ি বিক্রি হয় ৬০-১০০ টাকায়।

ফুলবাড়ী পৌর বাজারের ফল ব্যবসায়ী গোপাল মহন্ত বলেন, বাঁশের ঝুড়ির চেয়ে প্লাস্টিকের ক্যারেটে আম ও পণ্য পরিবহনে অনেক সুবিধা। ক্যারেটে আম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়া প্লাস্টিকের ক্যারেট মজবুত, বারবার ব্যবহার করা যায়। বাঁশের ঝুড়ি একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না।

দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মাহালি সম্প্রদায়ের লোকজন পারিবারিক ঐতিহ্য ও পেশা হিসেবে বাঁশ ও বেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বাঁশ ও বেতের তৈরি এসব পণ্য পরিবেশের জন্য উপকারী। আমরা তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। পরিবেশবান্ধব এ শিল্পকে ধরে রাখতে সাধ্যমতো সহায়তা দেওয়া হবে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়