রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪  |   ৩১ °সে

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৪, ১০:৩৭

‘গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখ, ফিরে এসে বিতরণ করবো’

‘গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখ, ফিরে এসে বিতরণ করবো’
অনলাইন ডেস্ক

‘আমাদের সোনার জামাই কীভাবে চলে গেলো। তার টাকা-পয়সা সবকিছু নিয়ে যেত, আমাদের জামাইকে ফিরিয়ে দিত। কেন ওইভাবে নিয়ে গেলো। সে তো কারও ক্ষতি করেনি। তাকে কেন মেরে ফেরা হলো। আমরা এর বিচার চাই।’

বুধবার (২২ মে) দুপুরে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের বাসভবনের নিচে এভাবেই বিলাপ করছিলেন তার আত্মীয় কালীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বিনা খাতুন।

পাশেই এমপি আনারের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সিঁড়িতে বসে বিলাপ করছিলেন এমপির এক সহযোগী রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে যাওয়ার আগে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। তিনি বলেছিলেন গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখ। আমি ফিরে এসে চেকগুলো সব একসঙ্গে বিতরণ করবো। সে চলে গেলো, এখন এভাবে কে গরিব মানুষকে নিয়ে ভাববে। কে আর এভাবে কথা বলবে।’

সহযোগীকে এমপির শেষকথা, ‘গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখ, ফিরে এসে বিতরণ করবো’

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ। ভারত যাওয়ার ১০ দিন পর বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকার হোটেল সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

১২ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান। আনার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ভারতে মরদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়ার পর তার দলীয় কার্যালয়ে শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এমপির নির্বাচনী এলাকা কালীগঞ্জ উপজেলার ১নং সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, ‘তার মৃত্যু সংবাদ শুনে রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসেছি। তার মরদেহ ভারতে পাওয়া গেছে। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা বলতে পারছি না। এমপির সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না, যা ছিল তা খুবই সামান্য, কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ছিল অনেক।’

তিনি আরও বলেন, এমপির পরিবার ঢাকায় অবস্থান করছে। তারা ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। তারা এলে আরও কিছু জানা যাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এমপির মরদেহ দেশে আনা হবে। আমরা এখন মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছি।

সহযোগীকে এমপির শেষকথা, ‘গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখ, ফিরে এসে বিতরণ করবো’

সেখানে পৌঁছে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার অন্তর্গত মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটসআপে মেসেজ করে জানান তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত গাড়িচালক তরিকুল ইসলামের মুঠোফোনেও একটি মেসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজীম আনার।

পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল তার। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানায় উদ্বিগ্ন এমপি পরিবার। এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন এমপির পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস।

আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়াামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা শুনে সমাধান করতেন। তিনি চলাচলের সময় কোনো পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

তার নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে যেতেন এবং শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। এমনও হয়েছে তিনি একদিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়