প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫, ০০:৩৭
জয়ের সিআরআই ও পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের নথি চেয়ে এনবিআরে চিঠি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশন এবং তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনকে (সিআরআই) দেওয়া দান ও অনুদান সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করে এনবিআরের চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১৬ ও ২০২৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সূচনা ফাউন্ডেশনের আয়কর ও প্রতিষ্ঠানটি অনুকূলে দান বা অনুদানের আয়কর মওকুফ করা হয়েছিল। দুদক মূলত ওই নথিপত্র তলব করেছে বলে জানা গেছে।
রোববার (১৩ জুলাই) দুদক থেকে এ সংক্রান্ত নথিপত্র আগামী ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, অনুসন্ধানের স্বার্থে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তার যেকোনো নথি তলব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনুসন্ধান টিম কাজের ধারাবাহিকতায় নথি তলব করে থাকতে পারেন।
দুদকের চিঠিতে এস আর ও নং-৮৭-আইন/২০১৬ মূলে সূচনা ফাউন্ডেশনকে দান ও অনুদান প্রদানকারীর আয়কর থেকে অব্যাহতি প্রদান সংক্রান্ত নথি (নোটশিটসহ) চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব নথি সংরক্ষণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম, পিতার নাম, বয়স, পদবি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা মোবাইল নম্বরসহ বর্ণিত নথি সংরক্ষণকারী শাখার কর্মবণ্টন তালিকার সত্যায়িত ফটোকপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
আর অভিযোগের বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি সজিব ওয়াজেদ জয় ও শেখ হাসিনা পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি সাধনের অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন– সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মুর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সূচনা ফাউন্ডেশনের কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১৬ ও ২০২৩ সালে এনবিআরের পৃথক প্রজ্ঞাপনে অটিস্টিক বা অটিজম শিশুদের মান উন্নয়নে কাজ করা সূচনা ফাউন্ডেশনের আয়কর ও প্রতিষ্ঠানটি অনুকূলে যেকোনো দান বা অনুদান আয়কর মওকুফ করা হয়েছিল।
অন্যদিকে গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকের সিএসআর খাত থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ৩৩ কোটি টাকা সহায়তার নামে আত্মসাতের অভিযোগে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
একইদিন জীবন বৃত্তান্তে ভুয়া যোগ্যতা দেখিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগে সায়মা ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আরও একটি মামলা করে সংস্থাটি।
অর্থ আত্মসাৎ মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পুতুল ও নজরুল ইসলাম মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা প্রদানের চাপ দেন। এর ফলে ২০১৭ সালের মে মাসে ২০টি ব্যাংক বাধ্য হয়ে তাদের সিএসআর খাত থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। এই অর্থ কীভাবে এবং কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তা জানার জন্য অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সূচনা ফাউন্ডেশনে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হলেও কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি এবং দুদকে এক অভিযানেও প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করেন উল্লেখ করে দ্বিতীয় মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি এ পদে নিয়োগ লাভের উদ্দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ২০২৩ সালে সিভি পাঠান। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি করে আবেদন এবং পরে আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের জন্য দাখিল করা সিভিতে জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সূচনা ফাউন্ডেশনে অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক। অভিযানে সূচনা ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের সন্দেহভাজন লেনদেন ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণও পায়। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সহকারী পরিচালক মো. নওশাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালায়।
স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ছিলেন।