শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৬ °সে

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৮:১২

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে আমরণ অনশন, অসুস্থ ২

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে আমরণ অনশন, অসুস্থ ২
অনলাইন ডেস্ক

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে আমরণ অনশনে বসা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুইজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোববার (১৭ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহপাঠীরা তাদের সুস্থ করার চেষ্টা করেন। পরে চিকিৎসক এনে স্যালাইন দেওয়া হয়।

অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৬ ব্যাচের জাহিদ হাসান জয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহিদুল ইসলাম মাহিদ।

এদিকে রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীদের দেখতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর শওকাত আলীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীরা অনশনে বসায় উপাচার্য এখন পর্যন্ত কিছু খাননি। এ কারণে তার প্রেসার লো হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের রেখে তিনি বাসায় যেতে চাইছেন না। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে এসে অনশন ভাঙার আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ সময় উপাচার্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ সংযুক্ত করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য আমরা নানা ধরনের আন্দোলন চালিয়ে আসছি। কিন্তু বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। ১৭ দিন আগে একটি কমিটি দেওয়া হলেও সেই কমিটি মিটিংই করতে পারেনি।

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ আইনই নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এর থেকে বড় প্রতারণা আর কিছু হতে পারে না। ছাত্র সংসদ আইন না থাকলে যদি টাকা নেওয়া যায়, তাহলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ও দেওয়া যাবে। আমরা রোডম্যাপ ঘোষণা না করা পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাবো। আমাদের দুইজন শিক্ষার্থী অসুস্থ। হয়তো আরও অনেকে অসুস্থ হতে পারে। যত দ্রুত সরকারের রাষ্ট্রপতি ও ইউজিসি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ততোই মঙ্গল।

এদিন অসুস্থ দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নিলে শিক্ষার্থীরা সেটাতেও প্রতিবাদ জানান। পরে চিকিৎসক এনে তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়। তারা জানান, অসুস্থ হওয়া কোনো শিক্ষার্থী বাইরে চিকিৎসা নেবে না।

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য ডক্টর শওকাত আলী বলেন, সারাদিন শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসায় আমিও দুপুরে খাবার খাইনি, বাসাতেও যাইনি। শিক্ষার্থীদের রেখে আমি কিভাবে বাসায় গিয়ে ঘুমাব? আমি ঢাকায় কথা বলেছি। সাতজনের কমিটি রয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, ১০ দিনের মধ্যে নির্ভুলভাবে আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমিও একমত। আমি নিজেই সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ সংযুক্ত করার জন্য কমিটি করে চিঠি দিয়েছি। সেটি আমলে নেয়াও হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রজ্ঞাপন জারি হলেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা করা সম্ভব হবে।

উপাচার্য আরও বলেন, ছাত্র সংসদ না থাকলেও কিভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করা হয়েছে সেটির জবাব আগের প্রশাসন দেবে। আমি ভিসি হওয়ার পর যে টাকা আদায় করা হয়েছে, সেটি আমি আলাদা অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছি।

এর আগে, রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বরাত দিয়ে উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর শওকাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, আগামী নভেম্বরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে। আমি ইউজিসির সদস্য তানজিম উদ্দিন স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আগামী নভেম্বরের মধ্যেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।

উপাচার্য আরও বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেই আবু সাঈদের হত্যার বিচার এবং ছাত্র সংসদ নিয়ে কথা বলেছি। সেটি শিক্ষার্থীরাও জানে। তাই তাদের ধৈর্য ধরতে বলব। আশা করি, স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে আমরাই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করব, ইনশাআল্লাহ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়