সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫  |   ২৯ °সে

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৫

রুদ্ধশ্বাস লড়াই, শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোর শুরু বাংলাদেশের

রুদ্ধশ্বাস লড়াই, শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোর শুরু বাংলাদেশের
অনলাইন ডেস্ক

দুশমন্থা চামিরার ফুলটসের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন তাওহিদ হৃদয়। ভাঙল ২৭ বল স্থায়ী ৪৫ রানের জুটি। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি, বল আঘাত হানত লেগ স্টাম্পে। ৩৭ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে ৫৮ রান করেন হৃদয়। ক্রিজে গিয়েই ফুলটসে বাউন্ডারিতে শুরু করেন জাকের আলি। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯ ওভার ৫ বলে ৪ উইকেট হাতে রেখেই ১৬৯ রান করে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ। এর ফলে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে থাকলো টাইগাররা।

বলা যায়, ১৬৯ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ম্যাচ জিতে রীতিমত অনেক বিশ্লেষকের হিসেব পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি এর চেয়ে বড় লক্ষ্য ছুঁয়ে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুটি ম্যাচ। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সর্বোচ্চ ২১৫ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ।

22001477

ম্যাচে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ১ রানের মাথায় তানজিদ হাসান তামিম কোনো রান না করেই বিদায় নেন। পরবর্তীতে সাময়িক সেই চাপ সামলে নেন সাইফ হাসান এবং লিটন দাস। একসময় ৫০ রানের জুটিও পার করেন এই দুই ব্যাটার।

তবে দলীয় ৬০ রানে লিটন ফিরে যান ব্যক্তিগত ২৩ রান করে। এরপর সাইফ একাই চার ছক্কার ইনিংস খেলতে থাকেন, তাকে সঙ্গ দেন তাওহীদ হৃদয়। একসময় সাইফ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধ-শতক। তখন ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছোটাচ্ছিলেন হৃদয়। এরপর ৪৫ বলে ৬১ রান করে বিদায় নেন সাইফ। সেখান থেকে শামীম হোসেনকে নিয়ে ২৭ বলে ৪৫ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন হৃদয়। ১৯তম ওভারে জয়ের ১০ রান আগে ফিরেছেন ৩৭ বলে ৫৮ রান করা হৃদয়। এরপর শেষের ওভারের নাটকের শুরু।

15241

৬ বলে দরকার ৫ রান। দাসুন শানাকার করা শেষ ওভারের প্রথম বলে ৪ মেরে ব্যবধানটাকে ১ রানে নামিয়ে আনলেন জাকের আলী। সেই ১ রান করতে আরও ৪ বল খেলতে হলো বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় বলে বোল্ড জাকের। তৃতীয় বলে রান হয়নি। চতুর্থ বলটি ছিল শর্ট, সেই বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিলেন মেহেদী হাসান। অন্য প্রান্তে তখন শামীম হোসেন রাগে কাঁপছিলেন। পরের বলটায় নতুন ব্যাটসম্যান নাসুম আহমেদ শর্ট থার্ডম্যানে পাঠিয়েই ১ রান নিয়ে দলকে জিতিয়ে দিলেন।

11221210

যদিও বোলিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল না বাংলাদেশের। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের বড় রানের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোতে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে স্পিনাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। তবে স্লগ ওভারে মুস্তাফিজ ছাড়া আর কেউই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারেনি। তাতে দেড়শ ছাড়ানোর মতো সংগ্রহ পেয়েছে লঙ্কানরা।

দুবাইতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৪ রান করেছেন দাসুন শানাকা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কুশল মেন্ডিসের কাছে ছক্কা হজম করেন শরিফুল ইসলাম। আক্রমণাত্মক শুরু করা লঙ্কানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি ভালো লেংথে করেছিলেন তাসকিন। মিডল ও লেগ স্টাম্পের ওপর থেকে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন পাথুম নিশাঙ্কা, টাইমিং ভালো না হওয়ায় ডিপ মিডউইকেটে সাইফ হাসানের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ১৫ বলে ২২ রান করেছেন এই ওপেনার।

212000

নিশাঙ্কা ফিরলেও আরেক ওপেনার মেন্ডিস রানের চাকা সচল রাখেন। ফলে পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। তবে পাওয়ার প্লে শেষে রানের চাকায় লাগাম দেয় বাংলাদেশ। অষ্টম ওভারে চতুর্থ বলে শেখ মেহেদিকে সুইপ করতে যান মেন্ডিস কিন্তু টপ এজ হয়ে বল উপরে উঠে যায়, ডিপ ব্যাকওয়াড স্কয়ার লেগে এবারও বল তালুবন্দি করেন সাইফ। ২৪ বলে ৩৪ রান করেছেন সাইফ। এরপর কামিল মিশরা-কুসাল পেরেরারা সুবিধা করতে পারেনি। এই সময়ে বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে বাংলাদেশ। তবে শেষদিকে দারুণ ব্যাটিং করেছেন দাসুন শানাকা ও চারিথ আসালঙ্কা।

1410001

বিশেষ করে শানাকা রীতিমতো ঝড় তোলেন। ৩৭ বলে অপরাজিত ৬৪ রান করেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। যা তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার আসালঙ্কা ১২ বলে করেছেন ২১ রান। তাতে দেড়শ পেরিয়ে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। বাংলাদেশের হয়ে ২০ রানে ৩ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া শেখ মেহেদি দুটি ও তাসকিন আহমেদ একটি উইকেট পেয়েছেন।

জবাবে সাইফ হাসান ও হৃদয়ের ব্যাটে ভর করে ১৯ ওভার ৫ বলে ৪ উইকেট হাতে রেখেই ১৬৯ রান করে জয় পায় বাংলাদেশ।

২৪ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ, প্রতিপক্ষ ভারত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ১৬৮/৭ (শানাকা ৬৪*, কুশল মেন্ডিস ৩৪, নিশাঙ্কা ২২, আসালাঙ্কা ২১, কুশল পেরেরা ১৬; মোস্তাফিজ ৩/২০, মেহেদী ২/২৫)।

বাংলাদেশ : ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ (সাইফ ৬১, হৃদয় ৫৮, লিটন ২৩, শামীম ১৪*; শানাকা ২/২১, হাসারাঙ্গা ২/২২)।

ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাইফ হাসান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়