প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৩:১৩
টেক্সাসে হঠাৎ কেন বন্যা, কেন এত প্রাণহানি

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে বন্য আগুন বা দাবানল নয়, বরং ভয়াবহ আকস্মিক বন্যা ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়েছে। গত ৪ জুলাই ‘আমেরিকা দিবস’ ছুটির দিনে শুরু হয়েছিল এই বন্যা।
আকস্মিক বন্যায় এ পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এখনো আরও বহু মানুষ নিখোঁজ আছেন বলে জানানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৪ শিশুসহ ৬৮ জনই কেরি কাউন্টির।
সেখানে নদী তীরবর্তী এক ক্রিশ্চিয়ান গার্লস ক্যাম্প বন্যার পানিতে ডুবে যায় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ক্যাম্প মিসটিক নামের ওই ক্যাম্পে থাকা শিশুদের মধ্যে দশটি মেয়ে শিশু ও একজন কাউন্সেলর এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে এটা নিশ্চিত। এদিকে ওই অঞ্চলে আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও ঝড়ের পূর্বাভাস আছে এবং এর ফলে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
গত শুক্রবার ভোর থেকে টেক্সাসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় প্রচণ্ড শক্তিশালী ঝড়ের ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১২ ইঞ্চি (৩০ সেন্টিমিটার) বৃষ্টিপাত হয়। এই পরিমাণ বৃষ্টি কের কাউন্টির গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের এক-তৃতীয়াংশের সমান।
এছাড়া এই অঞ্চলের মাটি শুষ্ক ও কঠিন হওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে মাটিতে শোষিত না হয়ে দ্রুত গড়িয়ে যায়, যা এলাকাটিকে প্রাকৃতিকভাবেই বন্যাপ্রবণ করে তুলেছে। যার কারণে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির বিশাল স্রোত গুয়াডালুপে নদীতে প্রবেশ করলে মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে নদীর পানি ২৬ ফুট (প্রায় ৮ মিটার) বেড়ে যায়।
ছুটির দীর্ঘ সপ্তাহান্তের মাঝামাঝি সময়ে, যখন অধিকাংশ মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখনই এই দুর্যোগ আঘাত হানে। অনেকেই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নদীর ধারে ক্যাম্প করতে এসেছিলেন, যার ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই আকস্মিক বন্যায় এখস পর্যন্ত অন্তত ৮২ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং এখনো ৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কের কাউন্টি, যেখানে অন্তত ৬৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৮ জনই শিশু।
এছাড়া গুয়াডালুপে নদীর তীরে অবস্থিত ক্যাম্প মিস্টিক নামের একটি খ্রিস্টান গ্রীষ্মকালীন শিবিরে অবস্থানরত অনেক কিশোরী নিখোঁজ রয়েছেন। নিহত শিশুদের মধ্যে ১৬ জনই এই ক্যাম্পের কিশোরী।
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযানে ১৪টি হেলিকপ্টার এবং জরুরি সেবার শত শত কর্মী অংশ নিয়েছেন। নিখোঁজদের খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুর্যোগকে ‘মারাত্মক’ আখ্যা দিয়ে কের কাউন্টিকে জাতীয় দুর্যোগ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় বিপর্যস্ত হলেও টেক্সাসে এর আগেও বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে দাবানল দেখা গেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে টেক্সাসে স্মোকহাউস ক্রিক দাবানল ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম দাবানল ছিল।
শক্তিশালী বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। মূলত একটি ইউটিলিটি খুঁটি ভেঙে পড়ার কারণে এই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিল বলে জানা যায়। এই দাবানলে প্রায় ১০ লাখ একরেরও বেশি জমি পুড়ে যায় এবং দুজনের প্রাণহানি ঘটে। হাজার হাজার গবাদি পশু এবং অন্যান্য প্রাণীও মারা যায় সেসময়।
এই দাবানলের কারণে অনেক শহর ও স্থাপনা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছিল। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট ৬০টি কাউন্টিতে দুর্যোগ ঘোষণা করেছিলেন।
বর্তমানে টেক্সাসে কোনো সক্রিয় বড় দাবানলের খবর নেই, তবে বন্যার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।