সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৬ °সে

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ২১:২৫

সবজির বাজারে দামের উত্তাপ, পুড়ছে ক্রেতার পকেট

সবজির বাজারে দামের উত্তাপ, পুড়ছে ক্রেতার পকেট
অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর সবজির বাজার এখন যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধের একদিকে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, অন্যদিকে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের সাধারণ মানুষ। ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি কেনা এখন যেন দুঃসাধ্য এক কাজ। বাজারে দৃশ্যত আগুন লাগেনি, কিন্তু দামের উত্তাপে পুড়ছে ক্রেতাদের পকেট। আগুন দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নগরীর অধিকাংশ মানুষ।

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, শসা ৮০ টাকায়, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কাকরোল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন (গোল) ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচু ৮০ টাকা, কুমড়া (জালি) প্রতি পিস ৬০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত বছরের ঠিক এই সময়ের দামের তুলনায় বর্তমানে সব ধরনের সবজির দাম বেশি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজারের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়, বরবটি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৬৫ টাকা, করলা ৫৫ থেকে ৮০ টাকা এবং ঝিঙা ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। এখন এই সবগুলো সবজির দাম গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি।

কেন এত দাম?

পাইকারি বাজার, খুচরা বাজার, আড়তদার ও ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়ার নানা কারণ উঠে এসেছে। এর মধ্যে আছে জুলাই-আগস্টের এই সময়ে বৃষ্টি ও বন্যায় সবজির খেত নষ্ট হওয়া। বৃষ্টিতে সবজি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে কিছু সবজি চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হয়। তাই সেসব সবজির দাম বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে এটিই বড় কারণ বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে সিন্ডিকেট এবং কারো কারো অতি মুনাফা করার বিষয়টাও বলেছেন কেউ কেউ।

এছাড়া গত বছরের তুলনায় এই সময়ে মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তখন বেশ কিছুদিন চাঁদাবাজি, পরিবহন ও বাজারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট ছিল না। এতে সবজির দাম কমে গিয়েছিল। পরে আবার এগুলো শুরু হওয়ায় এখন দাম বেড়েছে।

পাশাপাশি বর্ষার কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়কের পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে, যানচলাচলে সময় বেশি লাগছে। এ কারণে সবজি সরবরাহে ট্রাক ভাড়া বেশি লাগছে। এছাড়া মালবোঝাই ট্রাক থেকে সড়কের কিছু জায়গায় বিভিন্ন ফি’র নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে। ফলে ঢাকায় আসা পর্যন্ত পরিবহন খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে।

রাজধানীর রামপুরা বাজারে ক্রেতা সজিবুল ইসলাম বলেন, সব সবজির দাম বেশি। আধা কেজি, ২৫০ গ্রাম করে কিনলাম। কিছু সবজির দাম এত বেশি যে কেনার সাহসও পাচ্ছি না। গত বছর এই সময়ে দাম অনেক কম ছিল। এখন সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

মালিবাগ বাজারে কথা হয় ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাছ-মাংসের দাম বেশি থাকলে আমরা সবজি খাই। কিন্তু এখন সবজির দাম এত বেশি যে এটাও বিলাসিতা হয়ে গেছে। বাজারে ৮০-১০০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নেই। শুধু পেঁপে ৩০ টাকা আর মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজি। আর কিছু কেনা যাচ্ছে না।

বাড্ডায় একটি বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, আগে যে বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন পাইকারি বাজারেই সেটা ১০০ টাকা কেজি। তাহলে আমরা বিক্রি করব কত টাকায়? গত বছর সবজির দাম কম ছিল ঠিকই, কিন্তু এখন কারওয়ান বাজার থেকে মাল কিনতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্নভাবে এখানে-ওখানে টাকা দিতে হচ্ছে। রাস্তা খরচ আছে। মাল আনার ভাড়া, কর্মচারী বেতন, দোকান খরচ- সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে সবজির।

মহাখালীর সবজি বিক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, বৃষ্টির কারণে কৃষকের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরবরাহ কমেছে। এছাড়া নতুন সবজি বাজারে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এখন বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ, যে কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কম।

‎‎‎‎‎রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, সবজি নিয়ে আসার পর ট্রাকে থাকা অবস্থাতেই বিক্রি হয়। আরেকজন কিনে নেন। এভাবে হাতবদলে দাম বাড়ে। কারওয়ান বাজারে রাতে পাইকারিভাবে যে দামে সবজি বিক্রি হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি হয় খুচরা পর্যায়ে। হাত বদলায় আর দাম বাড়ে। এছাড়া এই সময়ে আবহাওয়ার কারণে জমিতে সবজি চাষ কম হয়, ফলে সরবরাহও কমে যায়। এ কারণে এখন সবজির দাম বেশি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়