বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪  |   ২৯ °সে

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ০৬:৫৬

আপিল গ্রহণ হয়নি, দানের টাকার কর দিতে হবে ড. ইউনূসকে

আপিল গ্রহণ হয়নি, দানের টাকার কর দিতে হবে ড. ইউনূসকে
অনলাইন ডেস্ক

নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে দান করা অর্থের বিপরীতে তিন করবর্ষে আয়কর কর্তৃপক্ষের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আরোপিত দানকর বৈধ ঘোষণা করা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তার আপিল গ্রহণ করেননি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে তাকে এই করের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

রবিবার (২৩ জুলাই) সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এই আদেশ দেন। ‘দানকর’ আরোপ বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে এই আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, লিভ টু আপিল খারিজ হওয়ায় দানকর আরোপ বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রইলো। দাবি করা ১৫ কোটির বেশি টাকার মধ্যে আপিল দায়েরের শর্তানুযায়ী ড. ইউনূস এরই মধ্যে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন। এখন বাকি প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা তাকে দিতে হবে।

এর আগে ড. ইউনূসের পক্ষে করা সময় আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। গত ১৭ জুলাই প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ২৩ জুলাই শুনানির জন্য দিন রাখেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি করেন আপিল বিভাগ।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন। ড. ইউনূসের লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ।

ট্রাস্ট তিনটি হলো প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার ট্রাস্ট। এই তিন ট্রাস্টে ড. ইউনূস দান করেন। তিন ট্রাস্টে দান করা অর্থের বিপরীতে আয়কর কর্তৃপক্ষ ‘দানকর’ আরোপ করে। এর বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের করা পৃথক তিনটি আবেদন খারিজ করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তিনটি ট্রাস্টে তিন করবর্ষে ড. ইউনূসের দেওয়া উপহারের (দান) বিপরীতে কর আরোপকে বৈধ বলা হয়।

এর আগে গত ২১ জুন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল করেন ড. ইউনূস। এর সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত এবং আয়কর কর্তৃপক্ষের দেওয়া এ সংক্রান্ত চাহিদাপত্রের কার্যক্রম স্থগিতের আরজিও ছিল। তিনটি লিভ টু আপিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হয়ে আজ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, তিন ট্রাস্টে ড. ইউনূসের দান করা অর্থের পরিমাণ ৭৬ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দানের বিপরীতে ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ করবর্ষের জন্য ‘দানকর’ হিসেবে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা আরোপ করে আয়কর কর্তৃপক্ষ। দাবি করা ১৫ কোটির বেশি টাকার মধ্যে আপিল দায়েরের শর্তানুযায়ী ড. ইউনূস এরই মধ্যে ৩ কোটি টাকা দিয়েছেন।

ড. ইউনূসের আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী বলেন, ‘তিনটি লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।’ আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করা হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী বলেন, ‘মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মামলা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-২০১২ করবর্ষে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

২০১২-১৩ করবর্ষে আট কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা দানকর দাবি করা হয়। আর ২০১৩-১৪ করবর্ষে সাত কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর।

দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ড. ইউনূস। তার দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এ কর দাবি করতে পারে না।

এরপর ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর তার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালে তিনি হাইকোর্টে তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন।

মামলাগুলোর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ চিন্তা করে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে যে টাকা দান করেছেন, সেই দানের বিপরীতে এনবিআরের আরোপ করা দানকর বৈধ ঘোষণা করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট।

৩১ মে রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন প্রতিষ্ঠানে ৭৭ কোটি টাকা দান করেছিলেন। তিনি বলছেন এর বিপরীতে কর দিতে হবে না। আমরা বলেছি দিতে হবে, এ কারণে এনবিআর তাকে নোটিশ দিয়েছিল। পরে তিনি হাইকোর্টে তিনটি রেফারেন্স মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট রেফারেন্সগুলো ঠিক বলেছেন। আবেদনগুলো খারিজ করে দিয়েছেন। এখন এনবিআরের দাবি করা কর দিতে হবে। এনবিআর ১৫ কোটি টাকার বেশি দাবি করেছিল। এরই মধ্যে তিনি তিন কোটি টাকার মতো দিয়েছেন। এখন বাকি ১২ কোটি টাকার বেশি কর পরিশোধ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়