প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:১৪
জনতার মহাসমুদ্র, খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘিরে এ জানাজায় অংশ নিতে লাখো মানুষ জড়ো হন। কালো পোশাক ও কালো ব্যাজ পরা বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। অনেকের হাতে ছিল দলীয় পতাকা ও খালেদা জিয়ার ছবি।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব জানাজা পড়ান। জানাজা সঞ্চালনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জানাজা উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় ছিল ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা।
খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা জানাজায় অংশ নেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকায় এসে শ্রদ্ধা জানান। পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাবিক, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি এন ধুঙ্গেল, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির উচ্চ শিক্ষা, শ্রম ও দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী আলি হায়দার আহমেদ, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা এবং শ্রীলংকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজিতা হেরাথের অংশ নেওয়ার কথা জানানো হয়। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, কাতারসহ আরও কয়েকটি দেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চীন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরাও শেষ বিদায়ে যোগ দেন।
মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও ‘আপসহীন নেত্রী’ খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে; বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়ার কফিন নেওয়া হয় গুলশানে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসভবনে। সেখান থেকে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো লাশবাহী গাড়ি বেলা পৌনে ১২টার দিকে সংসদ ভবনের সামনে পৌঁছায়। একটি বাসে করে সেখানে পৌঁছান তারেক রহমান ও পরিবারের সদস্যরা।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে স্থাপিত মঞ্চে খালেদা জিয়ার কফিন রাখা হয়। উল্লেখযোগ্য যে, এই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতেই ১৯৮১ সালের ২ জুন তাঁর স্বামী ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
জানাজার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়। জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মিরপুর সড়ক ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়।
ডিএমপি জানিয়েছে, কফিন বহনের সময় এভারকেয়ার হাসপাতাল, ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে, কুড়িল ফ্লাইওভার, নৌ সদর দপ্তর হয়ে ফিরোজা এবং গুলশান-২, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, এয়ারপোর্ট রোড, মহাখালী ফ্লাইওভার, জাহাঙ্গীর গেট, বিজয় সরণি ও উড়োজাহাজ ক্রসিংয়ের সড়কে বুধবার যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর। তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং দুইবার বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন।







