সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫  |   ২৭ °সে

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫, ০০:১৮

বেঁচে যাওয়া টাকা ফেরত পাবেন ৪৯৭৮ হাজি

বেঁচে যাওয়া টাকা ফেরত পাবেন ৪৯৭৮ হাজি
অনলাইন ডেস্ক

এ বছর হজে বাড়ি ভাড়া কমানোর কারণে বেঁচে যাওয়া টাকা ফেরত পাচ্ছেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করা হাজিরা।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করা পাঁচ হাজার হাজির মধ্যে ৪ হাজার ৯৭৮ জন হাজিকে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

রোববার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২৫ সালের হজ ব্যবস্থাপনা, অর্জন ও আগামী হজ মৌসুমের পরিকল্পনা ইস্যুতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, একজন হাজি কমপক্ষে ৫ হাজার ৩১৫ টাকা ফেরত পাবেন। সর্বোচ্চ ফেরত পাবেন ৫৩ হাজার ৬২৪ টাকা।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হাজিদের সেবা করাই সরকারের একমাত্র ব্রত। এ বছর হজ প্যাকেজে বাড়ি ভাড়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা ধার্য করা হয়েছিলো তার চেয়ে কিছু কম রেটে বাড়ি ভাড়া পাওয়া গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম রেটে সার্ভিস চার্জও মিলেছে। এর ফলে প্যাকেজের কিছু টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি মাধ্যমের প্রত্যেক হাজিকে ফেরত দেওয়া হবে।

তিনি জানান, সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর যেসব পূর্ণ প্যাকেজের হাজি চার ও ছয় নম্বর বাড়িতে ছিলেন তারা প্রত্যেকে ৫ হাজার ৩১৫ টাকা ফেরত পাবেন। চার নম্বর বাড়ির শর্ট প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২৩ হাজার ২৭ টাকা ফেরত পাবেন। এই প্যাকেজের ৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ১৩ হাজার ৫৭০ টাকা ফেরত পাবেন। পাঁচ ও ছয় নম্বর বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোনো হাজিকে রাখা ছিল না।

উপদেষ্টা জানান, সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর পূর্ণ প্যাকেজের যেসব হাজি এক নম্বর বাড়িতে ছিলেন তারা প্রত্যেকে ১৯ হাজার ১৯২ টাকা এবং শর্ট প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ৫১ হাজার ৬৯২ টাকা ফেরত পাবেন। দুই নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২১ হাজার ১৪২ টাকা এবং শর্ট প্যাকেজের হাজিরা ৫৩ হাজার ৬৪২ টাকা ফেরত পাবেন। তিন নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজিরা প্রত্যেকে ২৪ হাজার ২৬২ টাকা ফেরত পাবেন। এ বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোনো হাজি ছিলেন না। এই টাকা হাজিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠানো হবে।

এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক অভিহিত করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এবছর হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের গাইডলাইন অনুসারে আমরা সব প্রক্রিয়া যথাসময়ে সম্পন্ন করেছি। হজযাত্রী নিবন্ধন, হজের আবশ্যিক ব্যয়ের টাকা আইবিএনের মাধ্যমে সৌদিতে প্রেরণ, নুসুক মাসার নামক অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে মিনা-আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ, বাড়িভাড়া ও সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, পরিবহন চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এছাড়া, হজ ফ্লাইট শিডিউল পর্যালোচনা সাপেক্ষে হজযাত্রী পুনঃবণ্টনের প্রক্রিয়া যথাসময়ে সম্পন্ন করা হয়।

ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার সব বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিলো প্রো-অ্যাক্টিভ। কোনো সংকট তৈরি হওয়ার আগেই আমরা প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিয়েছি। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একটি টিম স্পিরিট নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এর ফলে, এবছর হজে যেতে না পারার বেদনায় কাউকে কাঁদতে হয়নি। কোনো হজ ফ্লাইট বিপর্যয় হয়নি। হজযাত্রীদের মধ্যে কোনোরূপ হট্টগোল, হৈ চৈ, শোরগোল দেখা যায়নি। বাংলাদেশের নিবন্ধিত শতভাগ হজযাত্রী হজ পালন করতে পেরেছেন।

দেশবাসীকে প্রতারক হতে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ড. খালিদ বলেন, হাজিদের রিফান্ড কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান বা দুস্থদের আর্থিক সহায়তাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া সব ধরনের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এরূপ টাকা পাঠাতে মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে ফোন করা কিংবা তার কাছ থেকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর কিংবা বিকাশ বা নগদ কিংবা রকেটের কোনো পিন নম্বর চাওয়া হয় না। এমনটি যদি কেউ করে তাহলে সে প্রতারক।

ড. খালিদ আরো বলেন, এবছর হজযাত্রী হারানো সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এবার ৮৯২ জন হজযাত্রী হারানো গিয়েছিলো যার মধ্যে ৮৯১ জনকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। এ মৌসুমে যে ৪৫ জন হজযাত্রী মারা গেছেন তাদের সবারই বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্তের পূর্ব ইতিহাস ছিল।

হজ ব্যবস্থাপনা টিম ওয়ার্ক হিসেবে অভিহিত করে উপদেষ্টা বলেন, সবাই টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে পারলে হজ ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও সাবলীল হবে-এটাই স্বাভাবিক। এ মৌসুমে হজ ব্যবস্থাপনায় টিম স্পিরিটেরই প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। তিনি হজ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স, হাবের সভাপতি ও মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এসময় ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মো. আয়াতুল ইসলাম, হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মঞ্জুরুল হক, হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার ও মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়